আদিত্য
বানান বিশ্লেষণ : +দ্+ই+ত্+য্+অ।
উচ্চারণ:
a
.d̪i.o (আ.দিত্.তো)

শব্দ-উৎস: বৈদিক ও সংস্কৃত আদিত্য>বাংলা আদিত্য।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: অদিতি (কশ্যপ পত্নী) +
(অপত্যার্থে)।
পদ:

বিশেষ্য
১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | হিন্দু দৈবসত্তা | দৈবসত্তা | আধ্যাত্মিক সত্তা | বিশ্বাস | ্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

অর্থ: হিন্দু ধর্মীয় চরিত্র অদিতির পুত্রদের আদিত্য নামে অভিহিত করা হয়।
ঋগ্বেদের ২ মণ্ডলের ২৭ সূক্তে ছয় জন আদিত্যের নাম পাওয়া যায়, এঁরা হলেন- অং,
অর্যমা, দক্ষ, বরুণ, ভগ মিত্র। ৯ মণ্ডলের ১১৪ সূক্তে আদিত্যের সংখ্যা ৭। তবে এই সূক্তে আদিত্যদের নাম পাওয়া যায় না। ১০ মণ্ডলের ৭২ সূক্তে আট পুত্রের কথা বলা হয়েছে। এর ভিতর মার্তণ্ড নামক পুত্রকে ত্যাগ করে অবশিষ্ট সাত পুত্রকে নিয়ে অদিতি দেবলোকে গিয়েছিলেন। এই সূক্তের ৪ সংখ্যক শ্লোকে বলা হয়েছে- উত্তানপদ হতে পৃথিবী জন্মিল, পৃথিবী হতে দিক সকল জন্মিল, অদিতি হতে দক্ষ জন্মিলেন, দক্ষ হতে আবার অদিতি জন্মিলেন। ৫ম শ্লোকে নির্দেশিত করে বলা হয়েছ হে দক্ষ! অদিতি যে জন্মিলেন, তিনি তোমার কন্যা। ঋগ্বেদের মতে দক্ষের মাতা হিসাবে যে অদিতির নাম পাওয়া যায়, সেই অদিতির সন্তানরা আদিত্য।

মৎস্য পুরাণ মতে
চাক্ষুষ মন্বন্তরে তুষিত নামে যে সব দেবতা ছিলনে তাঁরাই বৈবস্বত মন্বন্তরে দ্বাদশ আদিত্য নামে খ্যাত হন। এঁরা কশ্যপের ঔরসে দক্ষের কন্যা অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। অদিতির পূত্র হিসাবে এঁরা আদিত্য নাম লাভ করেন। এই পুত্ররা হলেন- অংশুমান, ইন্দ্র, ত্বষ্টা, ধাতা, পূষা, বিষ্ণু, ভগ, বরুণ, বিবস্বান, মিত্র, যম ও সবিতা। [ষষ্ঠ অধ্যায়। মৎস্য পূরাণ]
 

ব্রহ্মপুরাণ দক্ষের ঔরসে অদিতির গর্ভে ১২টি পুত্র জন্মে। এঁরা আদিত্য নামে অভিহিত হয়েছে। এই পুত্ররা হলেন- অংশ, অর্যমা, ত্বষ্টা, ধাতা, পূষা, বিধাতা, বিবস্বান, ভগ, বিষ্ণু, শত্রু, সবিতা। [তৃতীয় অধ্যায়। ব্রহ্মপুরাণ]

 

মহাভারতের মতে আদিত্য-এর সংখ্যা ১০। [সৃষ্টিবর্ণন | অনুক্রমণিকাধ্যায় | আদিপর্ব, মহাভারত]।
 

বরাহপুরাণের ষড়্‌বিংশ অধ্যায়ে সূর্যকে সরাসরি আদিত্য বলা হয়েছে আদি সত্তা হিসাবে। এই পুরাণ মতে- দিবা শব্দের অর্থ দিবস, সেই দিবা তাঁহা দ্বারা কৃত হইয়াছে বলিয়া তাঁহাকে দিবাকর কহে এবং ঐ সূর্য জগতের আদি বলিয়া আদিত্য নামে অভিহিত হইয়াছেন। [বরাহ পুরাণম্। পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত]

সূর্যপত্নী সংজ্ঞা সূর্যের তাপ সহ্য করতে অসমর্থ হলে- বিশ্বকর্মা সূর্যকে মোট ১২টি ভাগে ভাগ করেনএই ভাগগুলোকেও আদিত্য বলা হয়  উল্লেখ্য প্রলয়কালে এই দ্বাদশ আদিত্য উদিত হয়ে প্রলপয়োধি শোষণ করে।

তৈত্তিরিয়ে আদিত্যের সংখ্যা ৮ এরা হলেন অংশ,  বিবস্বান,  ও মিত্র


২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| নক্ষত্র | মহাকাশীয় বস্তু | প্রাকৃতিক লক্ষ্যবস্তু | এককঅংশ  | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: িন্দু বৈদিক ও পৌরাণিক কাহিনিতে- সূর্যকে দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই সূত্রে সূর্যের অপর নাম হিসেবে 'আদিত্য' বলা হয়।
 [দেখুন : সূর্য [জ্যোতির্বিজ্ঞান]

সমার্থক শব্দাবলি: অংশু,
অংশুধর, অংশুপতি, অংশুবাণ, অংশুভর্তা,  অংশুমৎ, অংশুমান, অংশুমালী, অংশুহস্ত, অঞ্জিষ্ঠ, অম্বরীষ, অরুণ, অর্ক, অর্চিষ্মান, অর্যমা, অশীতকর, অশীতমরীচি, অহঃপতি, অহকান্ত,  অহপতি, অহর্পতি, অহর্মণি, অহস্কর, অহিমকর, অহিমকিরণ, অহিমতেজা, অহিমদীধিতি, অহিমময়ূখ, অহিমরশ্মি, অহিমাংশু, আদিত্য, আফতাব, ইতু, উষ্ণকর, উষ্ণকিরণ, উষ্ণদীধিত, উষ্ণরশ্মি, ষ্ণাংশু, ঊষাপতি, কমলিনীকান্ত, কমলিনীনায়ক, কাশ্যপেয়, কিরণমালী, খমণি, খরকর, খরাংশ, গভস্তিপাণি, গভস্তিমান, গভস্তিহস্ত, গ্রহপতি, গ্রহরাজ, গ্রহাধীশ, চিত্রভানু, চিত্ররথ, জগচ্চক্ষু, জ্যোতিষ্মান, তপন, তমোঘ্ন, তমোহর, তমোরি, তমোহা, তাপন, তিমিরনাশকতিমিররিপু, তিমিরারি, ত্বিষাম্পতি, দিনকর, দিননাথ, দিনপতি, দিনমণি, দিনেশ, দিবাকর, দিবানাথ, দিবাবসু, দিবামণি, দ্বাদশাত্মা, দ্যুমণি, ধামকেশ, ধামনিধি, ধ্বান্তারাতি, ধ্বান্তারি, নভশ্চক্ষু, পদ্মপাণি, পূষা, প্রদ্যোতন, প্রভাকরবসু, বিকর্তন, বিবস্বান, বিভাকর, বিভাবসু, বিরোচন, বীতিহোত্র, ভানু, ভানুমান, ভাস্কর, ভাস্বান, ময়ূখমালী, মরীচিমালী, মার্তণ্ড, মিত্র, মিহির, রবি, রসাধার, লোলার্ক, শূর, সপ্তসপ্তি, সপ্তাশ্ব, সপ্তাশ্ববাহন, সবিতা, সহস্রকর, সহস্রকিরণ, সহস্ররশ্মি, সহস্রাংশু, সুতপা, সুযাত্র, সুর, সুরজ, সুরয, সুরুজ, সুরোত্তম, সূর্য, হরিতাশ্ব, হরিদশ্ব, হিরণ্যরেতাঃ।
ইংরেজি: sun                 
 


সূত্র :